রাজনীতিকে ভয়ের সংস্কৃতিচর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
- আপলোড সময় : ১৮-১১-২০২৪ ১২:১৭:২৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-১১-২০২৪ ১২:১৭:২৫ পূর্বাহ্ন
গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, “দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান মুহিবের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখার নামে ৩০টি দলিলে রয়েছে অন্তত ৩৭ একর জমি। সব জমিই পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের আশপাশে। কম করে হলেও এসব জমির মূল্য দেড়শ কোটি টাকা হবে। রেখা একজন কলেজ শিক্ষক হয়ে কীভাবে এত জমির মালিক হলেন তা স্থানীয়দের কাছে এক রকম রহস্য।”
অভিজ্ঞমহল মনে করেন, গণমাধ্যমকথিত, ‘একজন কলেজ শিক্ষক হয়ে কীভাবে এত জমির মালিক হলেন তা স্থানীয়দের কাছে এক রকম রহস্য’ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অবগত নন বিষয়টা মোটেও সত্য নয়। তাঁরা জানেন কিন্তু নীরবে সহ্য করেন এবং মুখ খোলেন না। সিনেমায় এমন হতে দেখা যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে শতজনের উপস্থিতিতে মাফিয়াচক্রের নিয়োজিত ঘাতক কাউকে খুন করে এবং অপরাধ নির্মূলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পুলিশের কাছে তারা ‘দেখি নি’ বলে সরে পড়েন। কারণ তাঁরা জানেন মাফিয়াচক্রের কোপ হতে তাদেরকে রক্ষা করার কেউ নেই।
বিদ্যমান প্রশাসন কিংবা সমাজ নিয়ন্ত্রক রাজনীতিক সমাজ সর্বাস্তৃত সহিংসতা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে না। এই সহিংসতা মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করে চলেছে অব্যাহত গতিতে। এই কারণেই তাঁরা কলেজ শিক্ষিক রেখার এতো জমির (মূল্য ১৫০ কোটি টাকা) মালিক হওয়ার কারণের কথা জেনেও না জনার ভান করেন।
বর্তমান সমাজসাংস্থিতিক পরিসরে আমাদের সমগ্র সমাজটার অবস্থা দাঁড়িয়েছে এমনি, সমাজটাই ভয়ে কুঁকড়ে আছে এবং রাজনীতিক সমাজ প্রতিনিয়ত এই ভয়ের চাষ করে চলেছে সমাজের পরতে পরতে। কেউই এগিয়ে আসছেন না, যাঁরা কীছু করার ক্ষমতা রাখেন। সমাজের ভেতরে ভয়ের সংস্কৃতির এইরূপ ভয়াবহ চর্চাকে তাত্ত্বিকরা কাঠামোগত সহিংসতা বলে অভিহিত করেছেন। এও এক ধরণের রাজনীতিÑ অনভিজাত (সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষ) শ্রেণির মানুষের বিরুদ্ধে অভিজাত (সংখ্যালঘিষ্ঠ পুঁজিপতি ধনী লোকেরা) শ্রেণির মানুষের রাজনীতি।
আমাদের দেশে ‘মানুষের ভয়’কে পণ্য করে ব্যবসা করার রাজনীতির অবসান চাই। তা-না হলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীনরা এই ‘ভয়ের সংস্কৃতি’র বিকাশ সাধন করেই চলবেন এবং প্রকারান্তরে জনশোষণ ও জনগণের প্রতি সন্ত্রাসী আচরণ কীছুতেই বন্ধ হবে না, এমনকি একজন সাধারণ কলেজ শিক্ষক রেখার শতকোটি টাকার মালিক হওয়ার ‘অশুভ সম্ভাবনা’কে কীছুতেই ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
সুতরাং রাষ্ট্রক্ষমতায় জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার রাজনীতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সাধারণ মানুষকে ভয়মুক্ত করতে হবে। রাজনীতিক দলগুলোর মধ্যে সংসদ সদস্য পদের মনোনয়ন শোষক শ্রেণির প্রতিনিধির কাছে বিক্রি করে দিলে চলবে না এবং এমনকি রাজনীতিক দলগুলোকে বিদেশি স্বার্থনির্ভর নীতির তাঁবেদারি থেকে বিরত থাকতে হবে। রাজনীতি হতে হবে বিদেশের নয় দেশের স্বার্থনির্ভর। সোজা কথায় রাজনীতিকে ভয়ের সংস্কৃতিচর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ